ইটাচুনা রাজবাড়ি
ইটাচুনা রাজবাড়ী
পশ্চিমবাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে কত ইতিহাস । এইসব ইতিহাসের শাক্ষী বহন করে আছে কত প্রাসাদ, ইমারত, কত প্রাচীর রাজবাড়ি , মন্দির, মজিদ , কেল্লা আরো কত কি । আজো কান পাতলে এইসব প্রাসাদের আনাচেকানাচে শোনা যায় অতীতের কত সুখ-দুঃখের কাহিনী । সেইরকমই এক অতীতের সাক্ষী বহনকারী রাজবাড়ি হল হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি । এই বাড়িটি বহনকরে চলেছে ইতিহাসের বহু শাক্ষ ।
১৭৬৬ সালে বর্গীরাজ কুন্দ্রারা ইটাচুনা রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন । এই কুন্দ্রা থেকেই পরবর্তীকালে কুন্ডুর সৃষ্টি । স্থানীয় মানুষেরা এই রাজবাড়ি টিকে বর্গীডাঙা বা বর্গীদের রাজবাড়িও বলে থাকেন ।
সবুজ মেঠো পথে কিছুদূর যাওয়ার পর রাজবাড়ির বিশাল ফটক । ফটক পেরিয়ে ভিতরে পা দিলে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে মন এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় । যদিও আজ আর সেকালের জৌলুস, লোকলস্কর কিছুই আর এখন অবশিষ্ঠ নেই । তবুও কড়িবরগার উচু উচু ছাদ, বহু পুরনো বাড়ির প্রাচীনত্বের গন্ধ, বিশাল নাটমন্দির, প্রাঙ্গন জুড়ে বিশাল বিশাল বাতিস্তম্ভ, প্রকান্ড ঝাড়বাতি দিয়ে সাজান বিরাট বৈঠকখানা নিয়ে যায় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়ে । এই বাড়িতে কোনায় কোনায় ছড়িয়ে আছে কত ইতিহাস । এই বাড়িটিতে পুরনো রীতি অনুযায়ী অন্দরমহল এবং বারমহল সম্পূর্ণভাবে আলাদা । কাছাড়ি বাড়ি, হিসাব ঘর, বাজার সরকারের ঘর পেরিয়ে তবে অন্দরমহলে যাওয়া যায় । এই বাড়িতেই শুটিং হয়েছিল সোনাক্ষী এবং রণবীর সিং এর ' লুটেরা' ছবির । এই বাড়িটিতে সাবেকি আমলের রাজবাড়ির সেই বিশেষ ব্যবস্থা চোখে পড়ে , যেখানে বাড়ির অন্দরমহলের মহিলারা ছোট ছোট অলিন্দে চোখ রেখে বারমহলের সবকিছুই দেখতে পান কিন্তু বারমহল থেকে অন্দরমহলের কিছুই দেখা যায়না । ইটাচুনা রাজবাড়ির সর্বত্রই সাবেকি প্রথা যেন ছড়িয়ে আছে । এখনে বড়কর্তা, মেজোকর্তার এইরকম ষাটটা সারিবদ্ধ ঘর, বিবর্ণ বহু পুরনো আমলের আসবাবপত্র, বিরাট সিন্দুক, কারুকার্যময় সুবিশাল পালঙ্ক সবই আছে । বাড়ির লম্বা নিস্তব্ধতাময় অলিন্দ , জানলা দিয়ে দেখা যায় খিড়কি, পুকুর, বাইরের প্রাকৃতির সবুজ নিরিবিলি পরিবেশ বড়ই মায়াবী মনে হয় । এক মনকেমন করা দুপুর নিয়ে চলে যায় কয়েকশত বছরের অতীতে ।
এই ইটাচুনা রাজবাড়ির ছাদও বড় সুন্দর, বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাস নাড়িয়ে দিয়ে যায় মনকে । এরপর সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে সন্ধ্যারতির ঘন্টা ধ্বনি ভেসে আসে রাজবাড়ি ঠাকুরদালান থেকে । এক অপুর্ব মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয় । তারপর নিঝুম নিস্তব্ধ রাত নেমে আসে সমস্ত রাজবাড়ি জুড়ে, সাথে নিয়ে আসে এক গাছমছমে শিরশিরানি ভাব । বাঁশুরির মনখারাপি সুরেলা ধ্বনি রাতের আঁধারিতে একমুহূর্তে নিয়ে চলে এক অন্য জগতে ।
অতীতের সাক্ষী বহনকারী ইটাচুনা রাজবাড়িতে একরাত রাত্রীবাস করার অভিগ্যতা অর্জন করা যেতেই পারে । বর্তমানে এখনে টুরিস্টদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। আর এখানকার খাওয়া দাওয়ার রাজকীয় ব্যবস্থা, পুরনো আমলের কাঁসার থালাবাসনে খাওয়া দাওয়া, বাঙালি ঘরানায় রাজকীয় খাবার টুরিস্টদের কে আরো বেশি করে আকৃষ্ঠ করে তোলে । এক শীতের দিনে বেরিয়ে পড়তেই পারেন ইতিহাসের শাক্ষী হতে ইটাচুনা রাজবাড়ির উদ্দেশ্যে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন