রহস্যের নাম কুলধারা/ ভৌতিক শহর কুলধারা
রাজস্থানের একটি পরিত্যক্ত শহরের নাম কুলধারা । অতীতে এই নগরীতে ছিল লোকলস্করে পরিপূর্ন । কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারনে কুলধারা পরিত্যক্ত নগরীতে পরিনত হয় । কি সেই কারন ? যার জন্যে সারি সারি বাড়ি-ঘর - রাস্তাঘাট- মন্দির ছেড়ে মানুষ রাতারাতি চলে যায় ! পড়ে থাকে শুধু এই অতীতের সাক্ষী বহনকারী পরিত্যক্ত জনপদ । শুধু যেখানে থাকার জন্য মানুষ নেই ।
থর মরুভূমির পাশের এই নগরীর পত্তন হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকে ।যোধপুরের পালিওয়াল সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণরা তাদের বসতি স্থাপন করেছিলেন । তাঁরা কৃষিকাজ এবং ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ।
১৮৯৯ সালে রচিত বই " তারিখ-ই-জয়সলমের" এ উল্লেখ করা হয় যে, কড়হান নামে এক পালিওয়াল ব্রাহ্মণ সেখান প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন । নগরীর ধ্বংসস্তূপে পাওয়া যায় তিনটি সমাধিক্ষেত্র এবং ৬০০ -বেশি বাড়ির ভগ্নাবশেষ । কুলধারা -সহ স্থানীয় ৮৩ টি গ্রাম নিয়ে জনপদটি গড়ে উঠেছিল ।
জনশ্রুতি আছে ১৮২৫ সালে রাখিপূর্ণিমার রাতে জনশূন্য হয়ে পড়ে নগরটি । রাতারাতি কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায় ১৫০০ গ্রামবাসীরা ।
স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি আছে, কুলধারা পরিত্যক্ত হওয়ার কাহিনী হিসাবে বলা হয়, তখনকার স্থানীয় সামন্ত শাসক সালিম সিংহের নজরে পড়েছিল গ্রামের এক কন্যা । তিনি তাকে হরন করার জন্যে সৈন্য পাঠালে ; গ্রামবাসীরা একরাত তার কাছ থেকে সময় চেয়ে নেন কন্যা টিকে পরদিন সকালে তার হাতে তুলে দেবেন বলে । কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি রাতারাতি গ্রামবাসীরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে ফন্দি করে । তারপরের দিন অবশ্য সেই সামন্ত একটি গ্রামবাসীকেও খুঁজে পাননি । সেই গ্রামবাসীরা কোথায় গেল তা নিয়ে ইতিহাস সম্পূর্ণ নীরব ।
তবে ঐতিহাসিকদের এক অংশের মতে , জলের অভাবে কুলধারা এবং কুলধারা সংলগ্ন এলাকা ধিরে ধিরে পরিত্যক্ত জনপদে পরিনত হয়েছে ।
কিন্তু সে যাইহোক , প্রায় ৫০০ বছর ধরে কুলধারা ধীরে ধীরে ভৌতিক নগরীতে পরিনত হয়েছে । দিল্লির প্যারানর্মাল সোসাইটির দাবি, রাতের বেলা কুলধারাতে অলৌকিক সব ঘটনা ঘটে চলে । রাত হলে কখন ভেসে আসে কোন নারীর কান্না, অদ্ভুত সব দৃশ্য দেখা যায় । যার কোন যৌক্তিকতা বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যায় না ।
সে যাইহোক, বর্তমানে রাজস্থানের ভৌতিক শহর কুলধারা পর্যটকদের কাছে এক অনবদ্য স্থানের মর্যাদা লাভ করেছে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন