ভৌতিক গল্প

                                        বিচার
সময়টা ঊনিশশো সত্তরের গোড়ার দিকে। গ্রীষ্মের কোনো একরাতে একটি গ্রাম্য পুলিশ ফাঁড়িতে বসে ইন্সপেক্টর সুমিত মিত্র বেশ কয়েকটি ফাইলে চোখ বোলাছিলেন। এমনসময় থানার একমাত্র দেওয়াল ঘড়িটাতে ঢংঢং করে  রাত এগারোটা বাজলো । সুমিতবাবু সে দিকে একবার চাইলেন । তারপর ফাইলপত্র গুছিয়ে দেরাজে তুলে রেখে ফাঁড়ি থেকে বেরোলেন মতিলাল হাবিলদারকে নিয়ে বড়োগাঁয়ের দিকে । ঐ এলাকায় নাকি খুব মদের ঠেক আজকাল বেড়েই চলেছে। তাই রাতের বেলায় এই অভিযান ।
মতিলাল আর তিনি দুজনে মিলে জীপে চড়ে বসলেন।

সুমিতবাবু হলেন একজন সৎ এবং কর্মঠ ইন্সপেক্টর। তিনি কখনো কাজে ফাঁকি দেননা। এই অঞ্চলে দিনপনেরো আগে তিনি বদলি হয়ে এসেছেন। প্রতিদিনই তিনি আসেপাশের অঞ্চলগুলোতে টহল দেন প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত । আজও তাই বেরিয়েছেন।
নির্জন গ্রাম্যপথ ধরে তাদের গাড়িটা এগিয়ে চলেছে।
এমনসময় হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়ায়, তিনি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে?


"স্যার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি দুহাত তুলে অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছিন। তাই গাড়িটা থামালাম।কোনো বিপদে পড়েছে মনে হয়।"
"মনে হচ্ছে ভদ্রঘরের বউ। মতিলাল জিজ্ঞাসা করে দেখতো কি  চায়?"
গাড়ি থামলে মেয়েটি দৌড়ে এলো গাড়ির কাছে।
তিনি দেখলেন, মেয়েটি গ্রামের আর পাঁচটা সাধারণ গৃহবধূ যেমন হয় ঠিক তেমনি দেখতে। কিন্তু তার মুখটা অস্বাভাবিক রকমের ফ্যাকাশে!চোখদুটো যেন মৃত মানুষের মতো স্থির। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না।
মেয়েটি খুব ভয় পেয়েছে বলে মনেহয় ।
তাদের গাড়ির কাছে এসে বলল, "স্যার একটু আগে আমি একটা খুন হতে দেখেছি। "
"কি দেখেছ ?"
"খুন হতে স্যার! আমি নিজের চোখে দেখেছি। ঐযে বাড়িটা দেখছেন ঐ বাড়িতে হারু মিস্তিরি ওর বউডারে গলাটিপে খুন করে পাসের কলাবাগানে পুঁতে দিয়েছে। আর  বউডার সব গয়নাগাটি, টাকাপয়সা নিয়ে রাতের আঁধারে পালানোর জন্যি তৈরী হচ্ছে।"
"তুমি ঠিক বলছ?"
"হ্যাঁ স্যার । "
"ঠিক আছে চলো আমাদের সাথে কোথায় লাশটা পোঁতা হয়েছে, দেখিয়ে দাও।"
মেয়েটি কিছুদূরে একটি কলাগাছ দেখিয়ে দিল।
তিনি মতিলালকে মাটিখুঁড়ে
দেখতে বললেন।
মতিলাল আর ড্রাইভার মাটিখুঁড়ে লাশটা বেরকরে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।
তিনি তাদের দৃষ্টিঅনুসরণ করে  লাশটার দিকে তাকালেন। একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল তাঁর শীড়দাঁড়া বেয়ে। তার সমস্ত শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে। এ কাকে দেখছেন তিনি? "কে এ?" শুধু তার গলা দিয়ে একটি মাত্র ভয়ার্ত আওয়াজ বের হলো ।চারপাশটা  কেমন যেন হঠাৎ করে বরফের মতো শীতল হা‌ওয়া ব‌‌‌‌ইতে লাগল। তার মতো ‌একজন সাহসী মানুষের শরীরেও ঠান্ডা কনকনে হাওয়া কাঁপুনি ধরিয়ে দিল।পাশে তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটি আসতে আসতে সেই সাথেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । শুধু  শুনতে পেলেন কে যেন ফিসফিস করে কানে কানে বলেছে," স্যার  সঠিক বিচারটা পাবোতো?" এরপর একটা রাত পাখির ভয়ার্ত হৃদয় বিদারক চিৎকার চারিদিকের নিস্তব্ধতাকে খানখান করে দিল।

তারপরে অবশ্য, তিনি মেয়েটির স্বামীটিকে আ্যরেস্ট করেন এবং উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ থাকায় আসামির শাস্তিও হয় নিজের স্ত্রীকে খুনের অপরাধে। কিন্তু সেই রাতের সেই ভয়াবহ ঘটনা তিনি জীবনের শেষ মূহূর্ত পর্যন্ত মনে রেখেছিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

রঘু ডাকাত ও তার ডাকাত কালীর মন্দিরের ইতিহাস

Kolkata's Some Memorable Horror Place ( কলকাতার কিছু বিখ্যাত ভূতুড়ে স্থান )

ভূতচতুর্দশী