পোস্টগুলি

2020 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

রঘু ডাকাত ও তার ডাকাত কালীর মন্দিরের ইতিহাস

ছবি
                        রঘু ও তার ডাকাত কালী                                            মন্দিরের ইতিহাস আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছরের প্রাচীন এই ডাকাত কালীর মন্দির । এই মন্দিরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে কত রহস্য, রোমহর্ষক  কাহিনী । বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাসাতের কাজীপাড়া অঞ্চলে এই ভগ্নপ্রায় মন্দিরটি অবস্থিত । জনশ্রুতি আছে, এক সময় এই অঞ্চলটি ছিল গভীর জঙ্গলে ঘেরা । জনমানবহীন এই গভীর জঙ্গলেই ছিল রঘু ডাকাতের ডেরা । সেসময় মন্দিরটিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল অষ্টধাতুর কালী মূর্তি । রঘু ডাকাত এই মন্দিরের অষ্টধাতুর কালী মূর্তিকে পূজো করে ডাকাতি করতে যেত তার ডাকাতদল নিয়ে । লোকমুখে শোনা যায়, একবার বৃটিশ পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায়, রাগে তরোয়াল দিয়ে রঘু ডাকাত মূর্তি ভেঙে দেয় এবং তারপর থেকে সেই ভাঙা মূর্তিতেই পূজো হত। কিন্তু সেই ভাঙা মূর্তি চুরি হয়ে যাওয়ার পর থেকে মন্দির লাগোয়া বটগাছকেই কালী রূপে পূজো করার রীতি  চলে...

ভূতচতুর্দশী

ছবি
বহু প্রাচীনকাল থেকেই ভূতের সঙ্গে বাঙালি জাতির সম্পর্ক নিবিড়ভাবে  জড়িয়ে আছে । বহু গল্প, কবিতা,উপন্যাসের মাধ্যমে ভূত হয়ে উঠেছে বাঙালির  জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । আর বাঙালি জাতির কাছে ভূতচতুর্দশী হল একটা  বিশেষ দিন । এই বিশেষ দিনটাতে বাঙালিরা মনে করেন ভূতেরা আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় । সেইজন্যে ভূতেদের হাত থেকে রক্ষা পেতে  বাঙালিরা এই দিনটিতে চোদ্দো শাক খান,  চোদ্দো পুরুষের জন্য জল দেন, চোদ্দোটি প্রদীপ জ্বলিয়ে এই দিনটিকে পালন করেন  , সেই অতীতকাল  থেকেই এই রীতি প্রচলিত ।  কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিন ভূতচতুর্দশী পালন করা হয় অথাৎ কালি পূজোর আগের দিন । বাঙালিদের এই রীতির সঙ্গে পাশ্চাত্যের একটি রীতির খুব সাদৃশ্য দেখা যায় । যা  'Halloween ' রীতি নামে পরিচিত । সে যাইহোক, এই ভূতচতুর্দশী আসলে কি?  এর পৌরাণিক ব্যাখাই বা কি ? সত্যিই কি এই ভূতচতুর্দশীর সাথে কোন ভূতের সম্পর্ক আছে?  না ভূতচতুর্দশীর সাথে ভূতের বিশেষ সম্পর্ক নেই । এর পিছনে যে পৌরাণিক কাহিনীটি আছে তা হল -  স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু বামনরূপে এসে  ...

ইটাচুনা রাজবাড়ি

ছবি
ইটাচুনা রাজবাড়ী পশ্চিমবাংলার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে আছে কত ইতিহাস । এইসব ইতিহাসের  শাক্ষী বহন করে আছে কত প্রাসাদ, ইমারত, কত প্রাচীর রাজবাড়ি , মন্দির, মজিদ , কেল্লা আরো কত কি । আজো কান পাতলে এইসব প্রাসাদের আনাচেকানাচে শোনা যায় অতীতের কত সুখ-দুঃখের  কাহিনী । সেইরকমই এক অতীতের সাক্ষী বহনকারী রাজবাড়ি হল হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি । এই বাড়িটি বহনকরে চলেছে  ইতিহাসের বহু শাক্ষ ।  ১৭৬৬ সালে বর্গীরাজ কুন্দ্রারা ইটাচুনা রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন । এই কুন্দ্রা থেকেই পরবর্তীকালে কুন্ডুর সৃষ্টি । স্থানীয় মানুষেরা এই রাজবাড়ি টিকে বর্গীডাঙা বা বর্গীদের রাজবাড়িও বলে থাকেন । সবুজ মেঠো পথে কিছুদূর যাওয়ার পর রাজবাড়ির বিশাল ফটক । ফটক পেরিয়ে  ভিতরে পা দিলে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে  মন এক ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় । যদিও আজ আর সেকালের জৌলুস, লোকলস্কর কিছুই আর এখন অবশিষ্ঠ নেই । তবুও কড়িবরগার উচু উচু ছাদ, বহু পুরনো বাড়ির প্রাচীনত্বের গন্ধ, বিশাল নাটমন্দির, প্রাঙ্গন জুড়ে বিশাল বিশাল বাতিস্তম্ভ, প্রকান্ড ঝাড়বাতি দিয়ে সাজান বিরাট বৈঠকখানা নিয়ে যায় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যা...

রায়বাঘিনী রানী ভবশঙ্করী

ছবি
  পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষের কাছে ভবশঙ্করী নামটা খুব একটা পরিচিত নয় ।  কিন্তু এই ভুরীশ্রেষ্ঠ রানী ছিলেন একজন বীরাঙ্গনা মহিলা ।  রানী ভবশঙ্করী জন্মসূত্রে ছিলেন ভুরীশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যের দুর্গরক্ষক দীননাথ চৌধুরীর কন্যা । এই ভুরীশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য বর্তমানে হাওড়া হুগলি জেলার অন্তর্গত । ছোট বেলাতেই ভবশঙ্করী পিতার কাছে অস্ত্র শিক্ষা পান এবং পরবর্তীকালে ভুরীশ্রেষ্ঠের পন্ডিতদের কাছ থেকে রাজনীতি, দর্শন, ধর্মশাস্ত্র, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করেছিলেন । এরপর স্বাধীনচেতা, যোদ্ধা ভবশঙ্করীর মায়ের মৃত্যুর পরে তার পিতা তাকে ভুরীশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যের রাজা রুদ্রনারায়নের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে দেন । তারপরেই  ভবশঙ্করী পরিচিত হন রানী ভবশঙ্করী নামে । তিনি ছিলেন দেবী চন্ডীর ভক্ত । সেই জন্য বিবাহের পরেই তিনি রাজপ্রাসাদের পাশে দেবী চন্ডীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি রোজই ভক্তি সহকারে দেবী চন্ডীরথ পূজা করতেন । সেই কারনে আজও হাওড়া এবং হুগলি জেলায় বেতাই চন্ডী ও মেলাই চন্ডীর পূজা  হয়ে থাকে । এছাড়াও রানী ভবশঙ্করী ভুরীশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্যের সুরক্ষা ব্যবস্থার দিকে দিকে বিশেষ ভাব...

যোধা বাঈয়ের সঙ্গে সম্রাট আকবরের সম্পর্ক কি ছিল? যোধা কি সত্যি সম্রাট আকবরের বেগম ছিলেন ? প্রকৃত সত্য কি ??

ছবি
 মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে রাজপুত  রাজকন্যা যোধা বাঈকে  নিয়ে অনেক মধুর প্রেমের গল্পতো আমরা সিনেমায় বা সিরিয়ালে দেখেছি । কিন্তু সম্রাট আকবরের সঙ্গে যোধা বাঈয়ের সত্যিই কি কোনো সম্পর্ক ছিল?  হ্যাঁ ছিল!  তবে সম্রাট আকবরের স্ত্রী কোন কালেই ছিলেন  না তিনি । তিনি ছিলেন সম্রাট আকবরের পুত্রবধূ এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় স্ত্রী ও সম্রাট শাহজাহানের গর্ভধারিণী । যিনি   ছিলেন জয়পুরের অম্বর রাজবংশের কন্যা   এবং মুঘল রাজমাতা , যার নাম বিবাহ পরবর্তীতে হয় মরিয়ম- উজ-জামানি । তাঁর জন্ম ১৫৭৩ সালে । রাজপুত পরিবারে যার নাম ছিল  মানমতি বাঈজী লাল । পিতা উদয় সিং এবং মাতা রানী মানরং দেবী । এরপরে ১৫৮৬ সালে ১৬ বছরের যুবরাজ সেলিমের সঙ্গে ১৩ বছরের মানমতির বিয়ে হয় । এই বিয়ে হিন্দু এবং মুসলিম দুই রীতি অনুযায়ী হয়েছিল এবং প্রচুর জাঁকজমক করে  সম্পন্ন হয় ।  এটি  ছিল  সেলিম তথা জাহাঙ্গীরের দ্বিতীয় বিবাহ । এর পরবর্তীকালে ১৫৯২ সালে  মানমতি অর্থাৎ যোধা বাঈয়ের ( যোধপুর থেকে এসেছেন তাই) গর্ভে জন্মগ্রহন করে এক পুত্র সন্তান ...

রহস্যের নাম কুলধারা/ ভৌতিক শহর কুলধারা

ছবি
 রাজস্থানের একটি পরিত্যক্ত শহরের নাম কুলধারা । অতীতে এই নগরীতে ছিল লোকলস্করে পরিপূর্ন । কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারনে কুলধারা পরিত্যক্ত নগরীতে পরিনত হয় । কি সেই কারন ? যার জন্যে   সারি সারি  বাড়ি-ঘর - রাস্তাঘাট- মন্দির ছেড়ে  মানুষ রাতারাতি চলে যায় ! পড়ে থাকে শুধু এই অতীতের সাক্ষী বহনকারী পরিত্যক্ত জনপদ । শুধু যেখানে থাকার জন্য মানুষ নেই । থর মরুভূমির পাশের এই নগরীর পত্তন হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকে ।যোধপুরের পালিওয়াল সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণরা তাদের বসতি স্থাপন করেছিলেন । তাঁরা কৃষিকাজ এবং ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ।  ১৮৯৯ সালে রচিত  বই " তারিখ-ই-জয়সলমের" এ উল্লেখ করা হয় যে, কড়হান নামে এক পালিওয়াল ব্রাহ্মণ সেখান প্রথম বসতি স্থাপন করেছিলেন । নগরীর ধ্বংসস্তূপে পাওয়া যায় তিনটি সমাধিক্ষেত্র এবং ৬০০ -বেশি বাড়ির ভগ্নাবশেষ । কুলধারা -সহ স্থানীয় ৮৩ টি গ্রাম নিয়ে  জনপদটি গড়ে উঠেছিল ।  জনশ্রুতি আছে ১৮২৫ সালে রাখিপূর্ণিমার রাতে জনশূন্য হয়ে পড়ে  নগরটি । রাতারাতি কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায় ১৫০০ গ্রামবাসীরা । স্থানীয়দের মধ্যে জনশ্রুতি আছে,  কু...

পোম্পেইয়ের ইতিহাস( প্রায় ২০০০ বছর আগের নগরীর ধ্বংসের কারন কি ?)

ছবি
 পোম্পেই ছিল একটি ভূমিকম্প প্রবন এলাকা । বছরে দুই থেকে চারবার ভূমিকম্প দেখা যেত পোম্পেইয়ে । আর সেই জন্যই পোম্পেইবাসী ভূমিকম্পের জন্যে কোনো সতর্কতা অবলম্বন করতো না। ৬২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি ইতালি কেঁপে ওঠে ভূমিকম্পে ।যায় ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোম্পেই ।ইতিহাসবিদদের মতে এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে আনুমানিক ৬।  ওদিকে ৫ ফেব্রুয়ারি পোম্পেইয়ের জাতীয় দিবস । ঐ দিন অগাস্টাস সিজার কে জাতির জনক ঘোষনা করা হয়েছিল । সেই উপলক্ষে নগরীর রাস্তায় রাস্তায় চলছিল উৎসবের প্রস্তুতি এবং আতশবাজি, রং আর তেলের বাতিতে নগর সাজানো হয়েছিল । কিন্তু নগরীর প্রাঙ্গণে ঠিক উৎসব শুরু হওয়ার মূহূর্তে ভূমিকম্প সবকিছু ওলট-পালট করে দেয় । ভেঙে পড়তে থাকে বড়ো বড়ো স্থাপত্য । জনতার মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে পড়ে । ফলে তাদের মধ্যে বিশৃ‍ঙ্খলা দেখা দেয় এবং আতশবাজির বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে বিস্ফোরণ ঘটার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়।  এর ১৬ বছরের মাথায় ভিসুভিয়ায় অগ্ন‍্যুৎপাত শুরু হয় আর সেই অগ্ন্যুৎপাতে ৭৯ সালের ২৪ শে আগস্ট ধ্বংস হয়ে যায় পোম্পেই নগরী , আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে । ১৫৯৯ সালে সারোনা নদীর গতিপথ তৈরির ইঞ্জিনিয়...

স্মৃতির আঙিনায়

ছবি
                                  স্মৃতির আঙিনায়  আজ তিথির মনটা একদম ভাল নেই। আজকাল প্রায়ই মনটা খারাপ হয়ে যায়, কেন যে এমনটা হয় ? তার কোন উত্তর সে খুঁজে পায়না । জীবনের কটা উত্তরই বা খুঁজে পেয়েছে সে? না ! এখন আর সেসব নিয়ে ভাবে না। কেন জানি না, একটা দীর্ঘশ্বাস আপনা হতেই বেরিয়ে আসে । কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনে কখন যে জানালার পাশে এসে বসলো, খেয়ালই করেনি। ছুটির দিনগুলোতে এই ভাড়াবাড়ির জানালা দিয়ে একটুকরো আকাশ দেখতে বড়ো ভালোলাগে তার। এভাবেই সারাটাদিন কেটে যায়। দূরের আকাশ, গ্রীষ্মের দুপুরের নিস্তব্ধতা যেন চারপাশটাকে আরও মোহময় করে তোলে । আর এইরকম গ্রীষ্মের নিস্তব্ধতাময় দুপুরের রোদের তেজ যত বাড়তে থাকে, চারদিকে যেন এক বিরাট শূন্যতা গ্রাস করে । এক এক সময় যেন মনে হয়, কোন অসীম শূন্যতা বিরাজ করছে তার চারপাশে, কোথাও কেউ নেই । সেই সবসময় বড়ো একা মনে হয় নিজেকে। বড়ো ফাঁকা ফাঁকা লাগে, একরাশ নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে তাকে। তবুও সে চাতকের মতোই বসে থাকে এক টুকরো আকাশ, দূরের ঐ মনখারাপি দুপুরের নিস্তব্ধতা দেখার জন্য । ...

আশার আলো

ছবি
                               আশার   আলো          (এই গল্পটি আমার লেখা প্রথম গল্প আর এই গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল চালচিত্র পত্রিকায়( e-book) ....আজ আবার গল্পটিকে আমার বন্ধুদের জন্য দিলাম এই পেজে...... আর আমার এই ছোট গল্পটিতে যদি কোন বানান ভুল হয়ে থাকে তো আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থী) মিলি আজ এক নতুন জীবনের আশায় দেরাদুনের পথে চলেছে । দুদিন পর থেকেই তার নতুন চাকরি তে জয়েন করার কথা । ট্রেনে যেতে যেতে কত কথা মনে পড়তে লাগলো । মনে পড়তে লাগলো তার স্কুল-কলেজ জীবনের কতকথা । তার বাবা-মায়ের কথা । বাবা- মা কখনোই তার এই বাইরে চাকরি করাটাকে মন থেকে মেনেনিতে পারেননি । মিলি ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড়ো হলেও  ; তার মা তাকে শহরের আদব-কায়দায় তৈরী করেছিলেন । তারপর যখন সে কলকাতার কলেজে ভর্তি হল ইনজিনিয়ারিং পড়তে; তখন থেকেই সে কলকাতাকে যেন আরও বেশি করে ভাল বাসতে শুরু করেছিল । এর অবশ্য আরও একটা কারণ ছিল, যেটা সে সবায়ের অলক্ষ্যে সযত্নে লুকিয়ে রেখেছিল ।আর সেটা হল তার ভালবাসার মানুষটি...

লকডাউন

ছবি
                                               লকডাউন পূর্ণিমাদেবীর আজ কদিন শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছেনা। বয়সতো কম হলনা, এই পঁচাত্তর ছুঁই ছুঁই। আর সেভাবে শরীর চলে না। আজকাল হাতপা খুব কাঁপে, দু-পা চললেই হাঁপিয়ে পড়েন। চোখেও ভাল দেখেননা। তার উপর আজ দুদিন ঠিক মতো খাওয়াও জোটেনি। শরীরটা খুবই দূর্বল লাগছে। কোনো রকমে এই দুদিন দুটো করে মুড়ি-জল খেয়ে কেটেছে একবেলা করে। কিন্তু আজ তো ঘরে খাবারের এক কানাকড়িও নেই। এদিকে খিদেয় পেটে মোচড় দিচ্ছে। সকালে উঠে ঘরদোর টা বহু কষ্টে পরিষ্কার করে কোনো রকমে টাইমের কল থেকে এক বালতি খাওয়ার জল তুলে নিয়ে, একেবারে স্নান করে ঘরে ঢুকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রনাম করে তার ঝুপরি ঘরের দোরের কাছে বসে, ভাবতে বসলেন যে আজকের দিনটা কিভাবে গুজরান হবে। কিন্তু ভেবেও কোনো কুলকিনারা পেলেন না। দুচোখ ভরে জল চলে এল । খিদের জালা যে বড়ো জালা! মনে মনে বললেন, "এই বুড়ো বয়সে কি না খেতে পেয়ে মরতে হবে ভগবান ?" এমনটা তো তাঁর সাথে হওয়ার কথা ছিলোনা? এখনতো নাতি-নাতনী, ছেলেপুলে নিয়ে...

ভৌতিক গল্প

ছবি
                                        বিচার সময়টা ঊনিশশো সত্তরের গোড়ার দিকে। গ্রীষ্মের কোনো একরাতে একটি গ্রাম্য পুলিশ ফাঁড়িতে বসে ইন্সপেক্টর সুমিত মিত্র বেশ কয়েকটি ফাইলে চোখ বোলাছিলেন। এমনসময় থানার একমাত্র দেওয়াল ঘড়িটাতে ঢংঢং করে  রাত এগারোটা বাজলো । সুমিতবাবু সে দিকে একবার চাইলেন । তারপর ফাইলপত্র গুছিয়ে দেরাজে তুলে রেখে ফাঁড়ি থেকে বেরোলেন মতিলাল হাবিলদারকে নিয়ে বড়োগাঁয়ের দিকে । ঐ এলাকায় নাকি খুব মদের ঠেক আজকাল বেড়েই চলেছে। তাই রাতের বেলায় এই অভিযান । মতিলাল আর তিনি দুজনে মিলে জীপে চড়ে বসলেন। সুমিতবাবু হলেন একজন সৎ এবং কর্মঠ ইন্সপেক্টর। তিনি কখনো কাজে ফাঁকি দেননা। এই অঞ্চলে দিনপনেরো আগে তিনি বদলি হয়ে এসেছেন। প্রতিদিনই তিনি আসেপাশের অঞ্চলগুলোতে টহল দেন প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত । আজও তাই বেরিয়েছেন। নির্জন গ্রাম্যপথ ধরে তাদের গাড়িটা এগিয়ে চলেছে। এমনসময় হঠাৎ রাস্তার মাঝখানে গাড়িটা দাঁড়িয়ে পড়ায়, তিনি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে? "স্যার সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি দ...

অনুগল্প (থ্যালাসেমিয়া)

ছবি
                                         থ্যালাসেমিয়া                 (অনিচ্ছাকৃত বানান ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থী) আজ ৮ই মে , বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। কথাটা ভেবেই ঝরনার মুখে ম্লান হাসি খেলে গেল। হ্যাঁ!  ঝরনা একজন থ্যালাসেমিয়া পেইশেন্ট। দেড় বছর বয়সে তার এই রোগ ধরা পড়ে, আর তখন থেকেই তাকে রক্ত নিতে হয়। তার জীবনটাই কেমন পরিহাস না ? যেখানে দেড়বছরের বাচ্চার রক্ত কি জিনিস বোঝার বয়সই হয়না; তখন থেকেই রক্ত আর সূঁচের সাথে তার গাঁটছড়া বাধা হয়ে যায়। কখনো কখনো পাঁচ-সাতবার সূঁচ ফুটিয়ে তার ছোট্টো ছোট্ট দুটো হাতপা ফুলে একসার হয়ে যেত, কখনো সূঁচ শিরায় ঠিকঠাক ফোটানো না হলে মাংশপেশীর মধ্যে রক্ত গিয়ে ফুলে কালশিটে পড়ে যেত আর তার সাথে  হতো প্রচন্ড যন্ত্রণা; আর হতোই বা বলছি কেন এখনোও তো  হয় । যখন সে আর একটু বড়ো হল, তার পাড়া- প্রতিবেশীরা তাকে জিজ্ঞেস করত, " হ্যাঁরে তুইযে রক্ত নিস, তোর লাগেনা, কষ্ট হয়না?" সে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতো," না গো আমার একটুও লা...